শ্লোগান (Slogan)

কথাঃ পার্থ বন্দোপাধ্যায়
সুর ও কন্ঠঃ প্রতুল মুখোপাধ্যায়

শ্লোগান দিতে গিয়ে আমি চিনতে শিখি
নতুন মানুষজন- শ্লোগান
শ্লোগান দিতে গিয়ে আমি বুঝতে শিখি
কে ভাই, কে দুশমন- শ্লোগান।

হাট মিটিং এ চোঙা ফুকেঁছি
গেট মিটিং এ গলা ভেঙেছি
চিনছি শহর গ্রাম
শ্লোগান দিতে গিয়ে আমি
সবার সাথে আমার দাবি
প্রকাশ্যে তুললাম-শ্লোগান।

শ্লোগান দিতে গিয়ে আমি
ভিড়ে গেলাম গানে
গলায় তেমন সুর খেলেনা
হোক বেসুরো পর্দা বদল
মিলিয়ে দিলাম সবার সাথে
মিলিয়ে দিলাম গলা
ঘুচিয়ে দিয়ে একল সিড়ে চলা
জুটলো যত আমার মত
ঘরের খেয়ে বনের ধারে
মোষ তাড়ানো উল্টো স্বভাব
মোষ তাড়ানো সহজ নাকি
মোষের শিঙে মৃত্যু বাঁধা
তবুও কারা লাল নিশানে
উস্কে তাকে চ্যালেন্জ ছোঁড়ে-শ্লোগান।

শ্লোগান দিতে গিয়ে আমি
বুঝেছি এই সার
সাবাশ যদি দিতেই হবে
সাবাশ দেব কার।
ভাংছে যারা ভাংবে যারা
খ্যাপা মোষের ঘাড়।

http://www.esnips.com/doc/706cc72f-19a7-4f19-b090-90d1f6f921a8/slogan
(এটা বাসায় আমি গাইবার চেষ্টা করেছি মাত্র)

জনতার ডাক শুনি (Janata'r Daak Shuni)

পিন্টু ভট্টাচার্য্য

জনতার ডাক শুনি পৃথিবীতে জনতার ডাক
ক্ষমা নেই, ক্ষমা নেই, শত্রুর ক্ষমা নেই
ঘরে ঘরে জনতার ডাক।।

সর্বহারা যারা বঞ্চিত শোষিত
পেয়েছে যে রক্তের আহবান
নন্দিত আলোকে ঝলমল বিশ্বে
সংগ্রামী জনতার অভিযান।।

বিপ্লবী জনতার সবুজ পাতায়
সংগ্রাম লেখা, শুধু সংগ্রাম।

বন্ধন মুক্তির ইশারায় জানলাম
শত্রুকে জানলাম, মিত্রকে চিনলাম
বাঁচবার স্পন্দনে রঞ্জিত কৃপাণে
ঘরে ঘরে জনতার ডাক।।

ঐ ডাকে 'অ' (Oi Dakey 'Au')

পিন্টু ভট্টাচার্য্য

অলস হইওনা ভাই ঐ ডাকে 'অ'
অধীর হইওনা ভাই ঐ ডাকে 'অ'
অনেক চেনার আছে,
অনেক জানার আছে,
অনেক বোঝার আছে
হাঁকে স্বরে 'অ'।

স্বরে 'অ' আছে আরও আছে স্বরে 'আ'
আঁধার ঘরে আশার আলো ভাই
হ্রস্ব 'ই' 'দীর্ঘ ঈ' আয় শিখে যা
ইশ্‌কুলেতে পথের দিশা পাই।

ভাইরে, ইরি ফলাই, না পাই খাইতে
ঈষাণ কোণে মেঘ জমে কেন
ঈগল কেন কাড়ে ভাইরে মুরগীর ছাকে ক'
হাঁকে স্বরে 'অ', স্বরে 'অ'।

উপাস কেন থাকতে হয়, উদাম কেন গা
ঊষাকালে সুরয কেন উঠে
ঊষাকালে পূর্বাকাশে সুরয কেন ওঠে
হ্রস্ব 'উ' দীর্ঘ 'ঊ' আয় শিখে যা
হ্রস্ব 'উ' দীর্ঘ 'ঊ' 'এ' 'ঐ' 'ও' 'ঔ' আয় শিখে যা
লেখাপড়া করলে চক্ষু ফোটে।

ভাই রে এই ঘর দু:খ ঐ ঘর সুখ
ঔষধ পথ্য জোটেনা তার কারণটা কী ক'
হাঁকে স্বরে 'অ', স্বরে 'অ'।

জাগো হে বাংলার জনতা (Jaago Hey Bangla'r Janata)

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সংগ্রহ (ওঠ হে ভারত লক্ষী)

জাগো হে বাংলার জনতা
বলো মানুষ মানুষের জন্য
ধর্ম বিভেদ বিষ জীর্ন
করো পুন্য এ জীবন ধন্য
স্বাপদে ভরা জনারন্য
এ জঘন্য
করো দূর আমাদের পাপ গন্য।।

বলো হয়ো নাকো হিংসায় মত্ত
বলো বলো সবে মানবতা সত্য
পৃথিবীটাকে বদলে দাও
নব এক শতক সমাগত।

জ্ঞানের প্রদীপ আজ জ্বালো
এই আমাদের বাংলাদেশে
সৈনিক লও তুলে ঝান্ডা
চেতানার এ নব উন্মেষে
তোমারই আলোকে অবশেষে
যাবে ভেসে
যারা এখনও অন্ধ অচৈতন্য।।

বলো হয়োনাকো .... শতক সমাগত।

মৌলবাদের কোন ঠাঁই নাই
এই আমাদের বাংলাদেশে
সৈনিক লও তুলে ঝান্ডা
চেতনার এ নব উন্মেষে
তোমারই আলোকে অবশেষে
যাবে ভেসে, যারা করেছে ধর্ম পূজি পণ্য।।

বলো হয়োনাকো ...শতক সমাগত।

আলু বেচো, ছোলা বেচো (Aalu Becho, Chola Becho)

কথাঃ সমীর রায়
সুর ও কন্ঠঃ প্রতুল মুখোপাধ্যায়

আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখর খানি
বেচোনা বেচোনা বন্ধু তোমার চোখের মণি।

কলা বেচো, কয়লা বেচো, বেচো মটরদানা
বুকের জ্বালা বুকেই জ্বলুক, কান্না বেচোনা।

ঝিঙে বেচো পাঁচ সিকেতে, হাজার টাকায় সোনা
বন্ধু তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন বেচোনা।

ঘরদোর বেচো ইচ্ছে হলে, করব নাকো মানা
হাতের কলম জনম দুখী, তাকে বেচোনা।

ওরা কপট, ওরা প্রবঞ্চক (Ora Kopot, Ora Probanchak)

কথাঃ এস, এম আবু বকর
সুরঃ রবিউল হুসেইন

ওরা কপট, ওরা প্রবঞ্চক
আমাদের জীবন বন্দী করেছে
যতসব প্রতারক।।

ওরা সত্যেরে ভয় পায়,
মিথ্যার করে পূজা
পরের মাথায় কাঁঠাল রেখে
কোষ খায় করে মজা
ওরা কথায় কথায় মত বদলায়, ওরা ঠগ্‌।।

ওরা সকালে যারে ভালোবাসে
বিকেলে তার দিকে চায়না
সবার সাথে চলে তালে
আপন কারও হয় না
ওরা ভীরুর ভীরু অতিশয় কাপুরুষ।।
মিথ্যা পোশাকে বাড়ে ওদের জৌলুস
ওরা কথায় কথায় দল বদলায়, ওরা ভন্ড।।

বানভাসি ওই মানুষগুলো (Baanbhasi Oi Manushgulo)

কথাঃ এস, এম আবু বকর
সুরঃ রবিউল হুসেইন

বানভাসি ওই মানুষগুলো
কতই দিশেহারা
যেদিক তাকায় সেইদিকে দেখে
শুধুই পানির ধারা।।

কাজ নাই, খাবার নাই
ভাসছে যে ঘর বানে
এদিক থেকে ওই দিক থেকে
ছুটে শুধুই প্রানের টানে
মাথা গোজার ঠাঁয় নাই,
হল যে সব সারা।।

কেউবা আছে গাছের ডালে
কেউবা বাড়ীর ছাদে
কেউবা আবার হতাশ হয়ে
অঝোর ধারায় কাঁদে
বিশ্ববাসী এসো সবাই
না যায় যেন মারা।।

মায়ের দেয়া মোটা কাপড় (Maayer Dea Mota Kapor)

রজনীকান্ত

মায়ের দেয়া মোটা কাপড়
মাথায় তুলে নে রে ভাই
দীন দুখিনী মা যে তোদের
তার বেশী আর সাধ্য নাই।।

ঐ মোটা সুতোর সঙ্গে মায়ের
অপার স্নেহ দেখতে পাই
আমরা এমনি পাষাণ,তাই ফেলে
ঐ, পরের দোরে ভিক্ষে চাই।।

ঐ দু:খী মায়ের ঘরে তোদের
সবার প্রচুর অন্ন নাই,
তবু তাই বেচে কাঁচ, সাবান, মোজা
কিনে করলি ঘর বোঝাই।।

আয়রে আমরা মায়ের নামে
এই প্রতিজ্ঞা করব ভাই
পরের জিনিস কিনব না
যদি-মায়ের ঘরের জিনিস পাই।

মোদের গোরব মোদের আশা (Moder Gourab Moder Asha)

অতুল প্রসাদ সেন

মোদের গোরব মোদের আশা,
আ'মরি বাংলা ভাষা,
তোমার কোলে তোমার বোলে
কতই শান্তি ভালোবাসা।।

কী যাদু বাংলা গানে
গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে
গেয়ে গান নাচে বাউল,
গান গেয়ে ধান কাটে চাষা।।

বিদ্যাপতি, চন্ডী, গবিন,
হেম, মধু, বঙ্কিম, নবীন
ওই ফুলেরই মধুর রসে
বাঁধল সুখে মধুর বাসা।।

বাজিয়ে রবি তোমার বীণে,
আনলো মালা জগৎ জিনে
তোমার চরণ তীর্থে মাগো-
জগৎ করে যাওয়া আসা।।

আমার মা গো (Amaar Maa Go)

কথা, সুর ও কন্ঠঃ প্রতুল মুখোপাধ্যায়

আমার মা গো, তোর চোখে কেন জলের ধারা?
দুশমনে রুখিতে তোর এক পুত্র দিল প্রাণ,
মা, দেখ আজ তোরে মা বলে ডাকে হাজার সন্তান
আমার মা গো, কে বলে তুই সন্তানহারা।।
আমার মা, আমার মা গো
তোর চোখে কেন জলের ধারা?

ধন্য বীর মাতা বীর, পুত্র গরবিনী, আমার মা;
সাহসী সন্তানদের শক্তি, স্বরূপিনী, আমার মা
ঘরে ঘরে আমরা মা তোর আশিস নিয়ে মাথে
সংগ্রাম করিব হিংস্র দানবের সাথে
আমার মা গো, আঁখি মুছে উঠে দাঁড়া,
আমার মা, আমার মা গো
তোর চোখে কেন জলের ধারা?

ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে (Dinga Bhasaao Sagar'e)

কথা, সুর ও কন্ঠঃ প্রতুল মুখোপাধ্যায়

ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথীরে
ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে
পূবের আকাশ রাঙা হল সাথী
ঘুমায়োনা আর, জাগো রে।
ভাসাও ডিঙ্গা সাগরে।।

(হো হো হো....................)

ওরে ডাঙ্গার টানে পরান ছিল বাঁধা,
কেন রে বন্ধু এতকাল
ছিল পরান বান্ধা এতকাল
গরজে গুমরি ডাকে শোন
ওই, তরঙ্গ উথাল পাথাল
পাল তুলে দাও, হাল ধর হাতে
দুস্তর সাগর হব পার
জাগায়ে মাতন ঢেউয়ের নাচন
মরণ-বাঁচন একাকার।

আমি বাংলায় গান গাই (Ami Banglaay Gaan Gai)

কথা , সুর ও কন্ঠঃ প্রতুল মুখোপাধ্যায়

আমি বাংলায় গান গাই,আমি বাংলার গান গাই
আমি আমার আমিকে চিরদিন-এই বাংলায় খুঁজে পাই
আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন, আমি বাংলায় বাঁধি সুর
আমি এই বাংলার মায়া ভরা পথে, হেঁটেছি এতটা দূর
বাংলা আমার জীবনানন্দ, বাংলা প্রাণের সুখ
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ।।
(আ.........................................)

আমি বাংলায় কথা কই, আমি বাংলার কথা কই
আমি বাংলায় ভাসি, বাংলায় হাসি,বাংলায় জেগে রই
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখেশুনে খেপে গিয়ে-করি বাংলায় চিৎকার
বাংলা আমার দৃপ্ত স্লোগান, ক্ষিপ্ত তীর ধনুক
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি,দেখি বাংলার মুখ।।
(আ.........................................)

আমি বাংলায় ভালোবাসি, আমি বাংলাকে ভালোবাসি
আমি তারই হাত ধরে সারা পৃথিবীর-মানুষের কাছে আসি
আমি যা কিছু মহান বরণ করেছি বিনম্র শ্রদ্ধায়
মিশে তেরো নদী, সাত সাগরের জল গঙ্গায়-পদ্মায়
বাংলা আমার তৃষ্ণার জল, তৃপ্ত শেষ চুমুক
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ।।
(আ.........................................)

ছোট ছোট দুটো পা (Choto Choto Duto Paa)

কথাঃ অসীম মন্ডল, প্রতুল মুখোপাধ্যায়
সুর ও কন্ঠঃ প্রতুল মুখোপাধ্যায়

ছোট ছোট দুটো পা, ছোট দুই হাত
দু'টাকায় খেটে খায় ভোর থেকে রাত।।

গালি খায়, লথি খায় করে মাথা হেঁট
তার দিকে চেয়ে রয় কত খালি পেট
তাই মুখ বুজে খেটে যায় ভোর থেকে রাত
ছোট ছোট দুটো পা, ছোট দুই হাত।।

কুড় তাক্‌ তাক্‌ দাদা, কুড় তাক্‌ তাক্‌,
এক নয়, দুই নয়, দুশো দশ লাখ,
দুশো দশ লাখ শিশু খাটে প্রাণ পাত,
ছোট ছোট দুটো পা, ছোট দুই হাত।।

'শিশুমেলা', 'শিশুদিন', 'শিশু বৎসর'
কত মধু মাখা বুলি, ছাপা অক্ষর
আল ঝলমল সভা, ভাবের জোয়ার
তবু ভবিষ্যতের খাটে ভূতের বেগার।।

এ মহাভারত দাদা, এ মহাভারত
মাছের মতই আছে শিশুর আড়ত
জ্বালানীর মত আছে শিশুর জোগান
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।

ন্যাংটো ছেলে আকাশে (Nangto Chele Akashe)

কথাঃ বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সুর ও কন্ঠঃ প্রতুল মুখোপাধ্যায়

ন্যাংটো ছেলে আকাশে হাত বাড়ায়
যদিও তার খিদেয় পুড়ছে গা
ফুটপাথে আজ লেগেছে জোছনা।

চাঁদ হেসে তার কপালে চুমু খায়,
লুকিয়ে মোছে চোখের জল মা
ফুটপাথে আজ লেগেছে জোছনা।।

জন্মিলে মরিতে হবে (Jonmile Morite Hobe)

কথা, সুর ও কন্ঠঃ প্রতুল মুখোপাধ্যায়

জন্মিলে মরিতে হবে রে, জানে তো সবাই
তবু মরণে মরণে অনেক
ফারাক আছে ভাই রে, সব মরণ নয় সমান।।

রক্তচোষার উস্কানিতে, জনতার দুশমনিতে,
সারা জনম গেলে কেটে মরণ যদি আসে
ওরে সেই মরণের ভার দেখে ভাই,
পাখীর পালক হাসে রে,সব মরণ নয় সমান।।

জীবন উৎসর্গ করে সবহারা জনতার তরে
মরণ যদি হয়,
ওরে তাহার ভারে হার মানে ঐ
পাহাড় হিমালয় রে, সব মরণ নয় সমান।।

সাপের মাথায় পা দিয়ে (Saper Mathay Paa Diye)

কথাঃ অমিত দাস
সুর ও কন্ঠঃ প্রতুল মুখোপাধ্যায়

সাপের মাথায় পা দিয়ে সে নাচে,
কান্না কেন, কান্না কেন তোর?

বন্যা, খরা, মড়ক বুকে বাঁচে
ভাবনা কেন, ভাবনা কেন তোর?
তুই কি ভাবিস তার ঘুমে সেই স্বপ্ন নেই? আছে।
সাপের মাথায় পা দিয়ে সে নাচে।।

রক্ততীলক ললাটে সূর্য (Rawkto Tilak Lolatey Surya)

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

রক্ততীলক ললাটে সূর্য, রাজপথ রোশনাই
শোনিত অর্য্যে প্রাণের পুষ্প অবিনশ্বরতায়।।

জীবন-মৃত্যু তুচ্ছ মোদের মায়ের অশ্রুজলে
লক্ষ ছেলের বক্ষ পাঁজর জ্বলছে বজ্রানলে
ধন্য মা তোর গর্ভ ধারণ
তুলনা যে তোর নাই।।

কন্ঠ মোদের রুদ্ধ করিবে, এমন সাধ্য কার
সহস্র কোটি কন্ঠে যখন দৃঢ় অঙ্গীকার।

আমরা শুনেছি রক্তধারায় মহাসাগরের গান
আমরা দেখেছি মৃত্যুর মুখে নবজীবনের বান
পুণ্য স্মৃতির আলোয় আমরা
জীবনের জয় গান।

জীবনের ছককাটা চত্বর (Jiboner Chawk Kata Chattar)

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

জীবনের ছককাটা চত্বর
কাঠ ফাটা রোদ্দুরে পুড়ছে
কুয়াশার স্বাক্ষর ধোঁয়াটে
মনের আকাশ কোণে উড়ছে।

জীবন দাবার এই খেলাতে
প্রহরের নাই কোন স্বস্তি
এলোমেলো চাল শুধু মেলাতে
কালের চাকায় ওই ঘুরছে।।

মানুষের শুধুই কি পরাজয়
নিয়তির হাতে চির বন্দী
ব্যর্থতা হতাশায় দিন রাত
ন্যায়-অন্যায়ের এই সন্ধি।

সেই ছকে তুমি আমি সব্বাই
পরাস্ত রাজা এক পলাতক
ঘুরে মরি যদি কোন পথ পাই
ক্ষীণ আশা তাই মন জুড়ছে।।

জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো (Janma Amaar Dhonnya Holo Maago)

কথাঃ নইম গহর
সুরঃ আজাদ রহমান

জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো,
এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাক।।

তোমার কথায় হাসতে পারি,
তোমার কথায় কাঁদতে পারি,
মরতে পারি তোমার বুকে
বুকে যদি রাখো আমায়-
বুকে যদি রাখো মাগো।।

তোমার কথায় কথা বলি পাখীর গানের মত,
তোমার দেখায় বিশ্ব দেখি বর্ণ কত শত,
তুমি আমার, তুমি আমার খেলার পুতুল,
আমার পাশে থাকো মাগো।

তোমার প্রেমে তোমার
গন্ধে পরান ভরে রাখি
এই তো আমার জীবন মরণ
এমনি যেন থাকি
বুকে তোমার, বুকে তোমার ঘুমিয়ে গেলে
জাগিয়ে দিও নাকো আমায়
জাগিয়ে দিও নাকো মাগো।।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে (Ek Sagar Rokter Binimoye)

কথাঃ গোবিন্দ হালদার
সুরঃ আপেল মাহ্‌মুদ

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে,
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলবনা।
দু:সহ বেদনার কন্টক পথ বেয়ে
শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যারা
আমরা তোমাদের ভূলব না।।

যুগের এ নিষ্ঠুর বন্ধন হতে
মুক্তির এ বারতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।।

কিষাণ কিষাণীর গানে গানে,
পদ্মা, মেঘনার কলতানে,
বাউলের একতারাতে আনন্দ ঝঙ্কারে
তোমাদের নাম ঝংকৃত হবে।

নতুন স্বদেশ গড়ার পথে
তোমরা চিরদিন দিশারী রবে
আমরা তোমাদের ভুলব না।।

এই শিকল পরা ছল (Ei Shikal Pora Chal)

কাজী নজরুল ইসলাম

এই শিকল পরা ছল
মোদের এই শিকল পরা ছল
এই শিকল পরেই
শিকল তোদের করবো রে বিকল।।

তোদের বন্ধ কারায় আসা
মোদের বন্দী হতে নয়
ওরে ক্ষয় করতে আসা
মোদের সবার বাঁধন ভয়
এই বাঁধন পরেই বাঁধন ভয়কে
করব মোরা জয়
এই শিকল বাঁধা পা নয়
এ শিকল ভাঙ্গা কল।।

ওরে ক্রন্দন নয় বন্ধন
এই শিকল ঝন ঝনা
এ যে মুক্তি পথের অগ্রদূতের
চরণ বন্দনা।
এই লাঞ্ছিতেরাই অত্যাচারকে
হানছে লাঞ্ছনা
ওদের অস্থি দিয়েই জ্বলবে দেশে
আবার বজ্রানল।

কারার ঐ লৌহকপাট (Kara'r Oi Louha Kopat)

কাজী নজরুল ইসলাম

কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান,
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ
ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।

গাজনের বাজনা বাজা,
কে মালিক, কে সে রাজা,
কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান পরবে ফাঁসি,
সর্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে!

ওরে ও পাগলা ভোলা,
দে রে দে প্রলয় দোলা,
গারদগুলা জোরসে ধরে হেচ্‌কা টানে
মার হাঁক হায়দারী হাঁক, কাধে নে দুন্দুভি ঢাক
ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে।

নাচে ওই কালবোশাখী,
কাটাবী কাল বসে কি
দেরে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি
লাথি মার ভাঙ্গরে তালা,
যত সব বন্দী শালায়-আগুন-জ্বালা, আগুন-জ্বালা,
ফেল উপাড়ি।।

জয় বাংলা, বাংলার জয় (Joy Bangla, Bangla'r Joy)

কথাঃ গাজী মাজহারুল আনোয়ার
সুরঃ আনোয়ার পারভেজ

জয় বাংলা, বাংলার জয়,
হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়
কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে
নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়।।

বাংলার প্রতি ঘরে ভরে দিতে চাই মোরা অন্নে
আমাদের রক্ত টগবগ দুলছে মুক্তির দৃপ্ত তারুণ্যে
নেই ভয়, হয় হোক রক্তের প্রচ্ছদ পট
তবু করিনা করিনা করিনা ভয়।।

অশোকের ছায়ে যেন রাখালের বাঁশরী
হয়ে গেছে একেবারে স্তদ্ধ
চারিদিকে শুনি আজ নিদারুণ হাহাকার
আর ওই কান্নার শব্দ।

শাসনের নামে চলে শোষণের সুকঠিন যন্ত্র
বজ্রের হুঙ্কারে শৃঙ্খল ভাঙ্গতে সংগ্রামী জনতা অতন্দ্র
আর নয়, তিলে তিলে বাঙালীর এই পরাজয়
আমি করিনা করিনা করিনা ভয়।।

ভূখা আর বেকারের মিছিলটাকে যেন ওই
দিন দিন শুধু বেড়ে যাচ্ছে
রোদে পুড়ে জলে ভিজে অসহায় হয়ে আজ
ফুটপাতে তারা ঠাঁই পাচ্ছে।

বারবার ঘুঘু এসে খেয়ে যেত দেবনা তো আর ধান
বাংলার দুশমন তোষামুদী চাটুকার
সাবধান, সাবধান, সাবধান
এই দিন, সৃষ্টির উল্লাসে হবে রঙীন
আর মানিনা, মানিনা কোন সংশয়।।

মায়েদের বুকে আজ শিশুদের দুধ নেই
অনাহারে তাই শিশু কাঁদছে
গরীবের পেটে আজ ভাত নেই ভাত নেই
দ্বারে দ্বারে তাই ছুটে যাচ্ছে।

মা-বোনেরা পরণে কাপড়ের লেশ নেই
লজ্জায় কেঁদে কেঁদে ফিরছে
ওষুধের অভাবে প্রতিটি ঘরে ঘরে,
রোগে শোকে ধুকে ধুকে মরছে
অন্ন চাই, বস্ত্র চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই
অত্যাচারী শোষকদের আজ
মুক্তি নাই, মুক্তি নাই , মুক্তি নাই।

জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ (Joy Joy Nobo Jaat Bangladesh)

কথা: ভুপেন হাজারিকা
সুর: ভুপেন হাজারিকা

জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ,
জয় জয় মুক্তিবাহিনী
ভারতীয় সৈন্যের সাথে রচিলে
মৈত্রীর কাহিনী।।

ধর্মান্ধতার বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষতা,
বিভেদগামী শক্তির বদলে
গঙ্গা পদ্মার একতা,
বিশাল ভলগা, গঙ্গা-পদ্মার
পাড় ভেঙ্গে এক হল পানি।।

সামন্ততন্ত্রের বিপরীতে, এক নতুন প্রজাতন্ত্র,
সমরতন্ত্রের বিপরীতে,
এক অভিনব সমাজতন্ত্র,
স্থাপনা করে রক্তে লিখিলে
শেখ মুজিবরের বাণী।।

শোন একটি মুজিবরের থেকে (Shono Ekti Mujibor er Theke)

কথা: গৌরী প্রসন্ন মজুমদার
সুর: অংশুমান রায়

শোন একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণী
বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।।

এই সবুজের বুকে চেরা মেঠো পথে
আবার যে যাব ফিরে, আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
শিল্পে-কাব্যে কোথায় আছে
হায়রে এমন সোনার খনি।।

বিশ্ব কবির ‘সোনার বাংলা’,
নজরুলের ‘বাংলাদেশ’,
জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’
রূপের যে তার নেই কো শেষ, বাংলাদেশ।

জয় বাংলা বলতে মন রে আমার
এখনও কেন ভাবো আবার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
অন্ধকারে পূর্বাকাশে-, উঠবে আবার দিনমণি।।

রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি (Raukto Diye Naam Likhechi)

কথা: আবুল কাশেম সন্দীপ
সুর: সুজেয় শ্যাম

রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি
বাংলাদেশের নাম
মুক্তি ছাড়া তুচ্ছ মোদের
এই জীবনের দাম।।

সংকটে আর সংঘাতে,
আমরা চলি সব একসাথে,
জীবন মরণ করে সব
লড়ছি অবিরাম।।

রক্ত যখন দিয়েছি আরও রক্ত দেব,
রক্তের প্রতিশোধ মোরা নেবই নেব,
ঘরে ঘরে আজ দূর্গ গড়েছি
বাংলার সন্তান,
সইবনা মোরা, সইবনা আর
জীবনের অপমান।।

জীবন জয়ের গৌরবে,
নতুন দিনের সৌরভে
মুক্ত স্বাধীন জীবন গড়া
মোদের মনস্কাম।

নোঙ্গর তোল তোল (Nongor Tolo Tolo)

কথাঃ নইম গহর
সুরঃ সমর দাস

নোঙ্গর তোল তোল
সময় যে হল হল
নোঙ্গর তোল তোল।।

(হেইয়া রে, হেইয়া হো,
ও মাঝি ভাই, মাঝি ভাই)

হাওয়ার বুকে নৌকা এবার জোয়ারে ভাসিয়ে দাও,
শক্ত মুঠির বাঁধনে বাঁধনে বজ্র বাঁধিয়া নাও,
সমুখে এবার দৃষ্টি তোমার
পেছনের কথা ভোল।।

দূর দিগন্তে সূর্য রথে দৃষ্টি রেখেছ স্থির,
সবুজ আশার স্বপ্নেরা আজ, নয়নে করেছে ভিড়,
হৃদয়ে তোমার মুক্তির আলো,
আলোর দুয়ার খোল।।

বিদ্রোহ আজ (Vidroho Aaj)

কথা: সুকান্ত ভট্টাচার্য্য
সুর: সলীল চৌধুরী

বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারিদিকে,
আমি যাই তারি দিন-পঞ্জিকা লিখে,
এত বিদ্রোহ কখনো দেখেনি কেউ,
দিকে দিকে ওঠে অবাধ্যতার ঢেউ;
স্বপ্ন-চূড়ার থেকে নেমে এসো সব---
শুনেছ? শুনছ উদ্দাম কলরব?
নয়া ইতিহাস লিখেছে ধর্মঘট,
রক্তে রক্তে আঁকা প্রচ্ছদ-পট।
প্রত্যহ যারা ঘৃণিত ও পদানত,
দেখ আজ তারা সবেগে সমুদ্যত;
তাদেরই দলের পিছনে আমিও আছি,
তাদেরই মধ্যে আমিও যে মরি-বাঁচি।
তাইতো চলেছি দিন-পঞ্জিকা লিখে---
বিদ্রোহ আজ! বিপ্লব চারিদিকে॥

অবাক পৃথিবী (Awbak Prithibee)

কথা: সুকান্ত ভট্টাচার্য্য
সুর: সলীল চৌধুরী

অবাক পৃথিবী! অবাক করলে তুমি
জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি।
অবাক পৃথিবী! আমরা যে পরাধীন
অবাক, কী দ্রুত জমে ক্রোধ দিন দিন;
অবাক পৃথিবী! অবাক করলে আরো---
দেখি এই দেশে অন্ন নেইকো কারো।
অবাক পৃথিবী! অবাক যে বারবার
দেখি এই দেশে মৃত্যুরই কারবার।
হিসাবের খাতা যখনি নিয়েছি হাতে
দেখেছি লিখিত--- `রক্ত খরচ' তাতে;
এদেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম,
অবাক পৃথিবী! সেলাম, তোমাকে সেলাম!

পথে এবার নামো সাথী (Pathey Ebar Naamo Sathi)

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

পথে এবার নামো সাথী পথেই হবে পথ চেনা
জনস্রোতে নানান মতে মনোরথের ঠিকানা,
হবে চেনা, হবে জানা।।

অনেক তো দিন গেল বৃথাই সংশয়ে,
এসো এবার দ্বিধার বাধা পার হয়ে
তোমার আমার সবার স্বপন
মিলাই প্রাণের মোহনায়
কিসের মানা।।

তখন এ গান তোলে তুফান
নবীন প্রানের প্লাবণ আনে দিকে দিকে
কিসের বাধা, বিপদ বরণ মরণ হরণ,
চরন ফেলে সে যায় হেকে।

তখন তো আর শোষণ বাঁধণমানব না
সবার এ দেশ সবার ছাড়া তো জানব না
পরোয়া নেই আকাশ বাতাস
হবে আশার পরোয়ানা।।

শান্তি না সংগ্রাম (Shanti Na Sangraam)

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

শান্তি না সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম
আমাদের সংগ্রাম চলবেই
জাগ্রত জনতার প্রতিজ্ঞা খরধার
লাখো লাখো চোখে শুধু জলবেই।।

আপোষ না প্রতিশোধ, প্রতিশোধ, প্রতিশোধ
রক্তের প্রতিশোধ রক্তেই
জাগো ওঠো দুর্বার, ভাঙ্গো করো চুরমার
লাথি মারো জালেমের তখতে,
জালেমের হুজুমত টলবেই।।

ধ্বংস না বিপ্লব, বিপ্লব, বিপ্লব
মহাকাশ পাক খায় ঘুরছে
মজুরের কিষাণের ইতিহাস জীবনের
খুনে লাল পতাকায় উঠছে
রোদ রাঙা বিপ্লব ফলবেই।।

মুক্তির মন্দির সোপানতলে (Muktir Mondir Sopan Toley)

কথা: কৃষ্ণ চন্দ্র দে
সুর: সমর দাস

মুক্তির মন্দির সোপানতলে
কত প্রাণ হল বলিদান,
লেখা আছে অশ্রুজলে ।।

কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা,
বন্দীশালার ওই শিকল ভাঙ্গা
তাঁরা কি ফিরিবে আজ সু-প্রভাতে,
যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে।।

যাঁরা স্বর্গগত তাঁরা এখনও জানেন
স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভুমি
এসো স্বদেশ ব্রতের মহা দীক্ষা লভি
সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি।

যাঁরা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা,
মৌন মলিন মুখে জোগালো ভাষা
আজি রক্ত কমলে গাঁথা মাল্যখানি
বিজয় লক্ষ্মী দেবে তাঁদেরই গলে।

আমরা সবাই বাঙালী (Amra Sobai Bangali)

কথা: গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
সুর: শ্যামল গুপ্ত

বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ,
বাংলার খ্রীষ্টান, বাংলার মুসলমান,
আমরা সবাই বাঙালী ।।

তিতুমীর, ঈসা খাঁ, সিরাজ
সন্তান এই বাংলাদেশের
ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, নেতাজী
সন্তান এই বাংলাদেশের
এই বাংলার কথা বলতে গিয়ে
বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে দিল কার সে কন্ঠস্বর,
মুজিবর, সে যে মুজিবর,
‘জয় বাংলা’ বলে রে ভাই।।

ছয়টি ছেলে বাংলাভাষার চরণে দিল প্রাণ,
তাঁরা বলে গেল ভাষাই ধর্ম,
ভাষাই মোদের মান।

মাইকেল, বিশ্বকবি, নজরুল
সন্তান এই বাংলাদেশের
কায়কোবাদ, বিবেকানন্দ, অরবিন্দ
সন্তান এই বাংলাদেশের
এই বাংলার কথা বলতে গিয়ে
বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে দিল কা সে কন্ঠস্বর,
মুজিবর, সে যে মুজিবর,
‘জয় বাংলা’ বলে রে ভাই।

আমাদের চেতনার সৈকতে (Amader Chetonar Sakat-e)

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

আমাদের চেতনার সৈকতে
একুশের ঢেউ মাথা কুটল
শহীদের রক্তের বিনিময়ে
চোখে জল কয় ফোঁটা জুটল।।

বছরের একদিন পুণ্য
সঞ্চয়ে হয় ঋণ পরিশোধ
হৃদয়ের পাত্রটি শুন্য
অন্যের পায়ে পায়ে লুটল।।

কতকাল আর এই প্রহসন
মুখে মুখে শুধু বাঙালীত্ব
কতকাল আর মোহবন্ধন
জীবনের পদে পদে নিত্য।

একুশের ঢেউ তবু লাগবেই
উর্বর বাংলার প্রান্তর
ফসলের মরশুম জাগবে
রক্ত গোলাপ যদি ফুটল।।

সেদিন আর কতদুরে (Sedin Aar Koto Durey)

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

সেদিন আর কতদুরে,
যখন প্রাণের সৌরভে
সবার গৌরবে ভরে
রবে এ দেশ ধন ধান্যে
শিক্ষায় জ্ঞানে-মান্যে
আনন্দের গানে গানে সুরে।।

(গামা পাধাপা, পা, সা, পা, ধা,
গামাপাধাপা, পা.......নি...........
নির্সার্রের্গার্রে. র্রে.........র্সানিধানি
পাধানির্সা র্সা..র্সা......নিধা.....)

কত না দিন কত রঙীন
কত না যে স্বপন করে বপন
ফিরে চলে গেছে কত না জন,হায়
সেই স্বপন ফুলে ফলে দাও ভরে।।

(পা. পা. পা. পাধাপা. পার্সাপা.
পা. ধা. নি. র্সা. নি. র্রে........
ধা. ধা. ধা. ধানিধা. ধার্রেধা.
ধা. নি. র্সা. র্গা. র্রে. র্সা.....)

এ দেশ আমার, এ দেশ তোমার
বুকের ধন, করো যতন
যেন না কেউ কাড়ে সেই রতন, হায়
বিভেদ বিচ্ছেদ শেষ দাও করে।।

ও আলোর পথযাত্রী (O Aalor Patha Yatri)

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

ও আলোর পথযাত্রী,এ যে রাত্রী
এখানে থেমোনা
এ বালুচরে আশার তরণী তোমার
যেন বেঁধোনা
আমি শ্রান্ত যে, তবু হাল ধর
আমি রিক্ত যে, সেই সান্তনা,
তব ছিন্ন পালে জয় পতাকা তুলে,
সূর্য তোরণ দাও হানা।।

আহা বুক ভেঙ্গে ভেঙ্গে,
পথে নেমে শোণিত কণা
কত যুগ ধরে ধরে
করেছে তারা সূর্য রচনা
আর কত দূর, ওই মোহানা
এ যে কুয়শা, এ যে ছলনা
এই বঞ্চনাকে পার হলেই পাবে
জন সমূদ্রের ঠিকানা।।

আহ্বান, শোন আহ্বান,
আসে মাঠ-ঘাট বন পেরিয়ে
দুস্তর বাধা প্রস্তর ঠেলে
বন্যার মত বেরিয়ে
যুগ সঞ্চিত সুপ্তি দিয়েছে সাড়া
হিমগিরি শুনল কি সূর্যের ইশারা
যাত্রা শুরু উচ্ছল চলে দূর্বার বেগে তটিনী,
উত্তাল তালে উদ্যাম নাচে মুক্ত স্রোত নটিনী
এ শুধু সত্য যে নব প্রাণে জেগেছে,
রণ সাজে সেজেছে, অধিকার অর্জনে।

নাও গান ভরে (Naao Gaan Bhorey)

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

নাও গান ভরে, নাও প্রাণ ভরে
চলো যাই যেখানে প্রান্তর
সোনার ধানের শীষে ডাকে যেখানে
সোনা ভরা অন্তর।।

সেই ঝিম ঝিম ঝিম ধরা দিন দিন দিন,
যেথা ঝির ঝির ঝির ঝির বাতাসে
সেই ঝিন ঝিন ঝিন সুরে ঝিঁঝি ডাকা দুপুরে,
শান্তির আহবান যে আসে
স্বপ্নের তুলি দেয় সোনা রঙ আকাশে।।

ডাক দেয় শোন শোন, তূর্য বেজেছে যে,
রাত্রির অবসানে সূর্য জেগেছে যে
রঙে রঙে ধরণী, হল নানা বরণী
ঝর ঝর ঝরণার সুরে।।

আর নয় দেরী আর নয়, বন্ধ ঘরে আর নয়,
সুপ্তি ভেঙ্গেছে যে, মুক্তি ডেকেছে যে
কুলু কুলু তটিনী, তরী যেন নটিনী
নেচে নেচে চলে যায় দূরে।।

মোরা যাত্রী একই তরণীর (Mora Yatri Ekoi Toronir)

ভূপেন হাজারিকা

মোরা যাত্রী একই তরণীর,
সহযাত্রী একই তরণীর
যদি সংঘাত হয় তবে ধ্বংস হবে
গর্ব মোদের প্রগতির।।

প্রভু চোখ মেলে চাও
দেখ স্বর্গ হতে,
ও মহা প্রভু, কী শুন্য সাগর,
এই তরী পৃথিবীর সারা মানবজাতির,
তাই ঈশ্বর গড়ে দিন মিলনের নৌকো
চোখ কারও কালো কারও নীল কারও পিঙ্গল,
তাই তো দেখি তোমার আমার
একই আকাশ একই ধরণী।

আয়রে ও আয়রে (Aay re O Aay re)

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

আয়রে ও আয়রে,
ও ভাই রে, ও ভাই রে,
ভাই বন্ধু, চল্‌ যাই রে,
ও রাম-রহিমের বাছা‌,
ও বাঁচা আপন বাঁচা
চল্‌ ধান কাটি আর কাকে ডরি,
নিজ খামার নিজে ভরি,
কাস্তেটা শানাই রে।।

এই মাটিতে কলিজার আশা,
স্বপ্নের বীজ বুনি,
আর চোখেরই জল সেচ দিয়ে
ফসলের কাল গুনি
ক্ষেতের আলে আলে
আজ সোনারই ঢেউ খেলে
আহা মাটি মাতা
দুই হাতে অন্ন ঢালে
এই ঘরে ঘরে নবান্নেরই হবে কি রোশনাই।।

আহা কার ঘরে জ্বলেনি দীপ
কে আছ আঁধারে,
আহা কার বাছার জোটেনি দুধ
আছ অনাহারে,
আয় আয় মাটির টানে
কন্ঠ ভরি গানে
মাটি মোদের মাতা
আমরাই তো বিধাতা
এই মাটিতে নবজীবনের, রংমহল বানাই রে।।

হেই সামালো (Hey Samhalo)

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

হেই সামালো ধান হো
কাস্তেটা দাও শাণ হো
জান কবুল আর মান কবুল
আর দেবনা আর দেবনা
রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো।।

চিনি তোমায় চিনি গো
জানি তোমায় জানি গো,
সাদা হাতির কালা মাহুত তুমি নও।।

পঞ্চাশে লাখ প্রাণ দিসি
মা-বোনেদের মান দিসি,
কালোবাজার আলো কর তুমি না।।

মোরা তুলবনা ধান পরের গোলায়
মরবনা আর ক্ষুধার জ্বালায় মরবনা
ধার জমিতে লাঙ্গল চালাই
ঢের সয়েসি আর তো মোরা সইবনা
এই লাঙ্গল ধরা কড়া হাতের শপথ ভুলবনা।।

আর দূর নেই দিগন্তের (Aar Dur Nei Diganter)

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

আর দূর নেই দিগন্তের বেশী দূর নেই
সব ক্লান্তির অন্ত এবার
এই রাত্রির সীমান্তের যারা যাত্রী,
সংক্রান্তির লগ্ন এবার।।

ধরো তুলে ধরো যুগান্তের জড় যত সাধনা,
পরো মাথে পরো রক্ত তিলক
পরো যত বেদনা।
ঢেউয়ে ঢেউয়ে দুলে, সে কী মাতন তোলে,
জন কল্লোলে আসে বন্যা।।

যত আছে ক্ষত শতাব্দীর শত জমা অপমান,
এসো আজ তবে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে
হবে যত অসমান।
এসো সৎ ভাবে ও বুকে বুকে পাবে
দধিচির উক্তির সন্ধান। ।

যুদ্ধের শেষ নাই (Zudhdher Shesh Nai)

কথা: এস, এম, আবু বকর
সুর: রবিউল হুসেইন

যুদ্ধ যুদ্ধ যুদ্ধ, ডাক দিয়ে যায়
জীবন যুদ্ধ নতুন যুদ্ধ, যুদ্ধের শেষ নাই।।

বড়তে ছোটতে যুদ্ধ, নতুনে পুরাতনে যুদ্ধ
মানুষে অমানুষে যুদ্ধ, সময়ে অসময়ে যুদ্ধ
তুমি চাও বা না চাও যুদ্ধ থেমে নাই।।

হয় আমি মরব না হয় তুমি মরবে
কেউ তো বেঁচে রবে, তারা সবাই লড়বে
তোমার আমার মৃত্যু হলেও মানুষের মৃত্যু নাই
যুদ্ধের শেষ নাই।।

একুশ এসেছে ফিরে (Ekush Esechey Phirey)

কথা: রবিউল হুসেইন
সুর: রবিউল হুসেইন

সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর মনে একুশ এসেছে ফিরে
অমর শহীদ ভাইয়েরা আমার তোমাদের স্মৃতি ঘিরে।।

ওরা চেয়েছিল রুদ্ধ করতে মোদের কন্ঠস্বর
উত্তাল পথে নেমেছিল তাই দুর্জয় দূর্বার
তোমাদের প্রতিবাদে
হেরে গিয়ে ওরা মৃত্যু হেনেছে, রেখেছে অমর করে।।

বাহান্ন সাল, একুশে ফেব্রুয়ারী
মৃত্যুঞ্জয়ী ভাইয়েরা আমার
মাতৃভাষার দিলে অধিকার
কি করে ভুলিতে পারি।

চেয়ে দেখ আজ রক্ত পলাশে এদেশের প্রান্তর
শ্রদ্ধায় কত রাঙা হয়ে আছে উজ্জ্বল ভাস্বর
তোমাদের স্মৃতি জ্বেলে
শত কোটি ফুল সাজিয়ে দিয়েছি শহীদ মিনার ভরে।।

ষোলই ডিসেম্বর (Sholoi December)

কথা: এস, এম, আবু বকর
সুর: রবিউল হুসেইন

ষোলই ডিসেম্বর
তুমি গর্ব আমার, আমার অহঙ্কার
সালাম তোমায়, তোমায় নমস্কার।।

সেদিন যখন জ্বলে ওঠে বাঙালী
নিয়ে আপন পরিচয়
মানব দানব তোমার কাছে
প্রাণ ভিক্ষা চায়
তখন আমার মায়ের আঁচল উড়ে আকাশে
এমন ক্ষণ আমি পাই নাগো আর।।

ইতিহাসের যত রুদ্ধ পাতা
পেরিয়ে তোমায় পেলাম
প্রতি পাতায় রক্তে লেখা
শত শহীদের নাম
এলে তুমি আলো হয়ে মোছাতে অন্ধকার
এমন আলো বাধা মানে নাগো আর।।

নিগ্রো ভাই আমার পল রবসন (Negro Bhai Amar Paul Robeson)

হেমাঙ্গ বিশ্বাস

ওরা আমাদের গান গাইতে দেয়না
নিগ্রো ভাই আমার পল রবসন
আমরা আমাদের গান গাই ওরা চায়না।।

ওরা ভয় পেয়েছে রবসন
আমাদের রক্ত চোখকে ভয় পেয়েছে
আমাদের দৃপ্ত কন্ঠে ভয় পেয়েছে
আমাদের কুচকাওয়াজে ভয় পেয়েছে রবসন
ওরা বিপ্লবের ডাঙ্গরুতে ভয় পেয়েছে রবসন।।

ওরা ভয় পেয়েছে জীবনের
ওরা ভয় পেয়েছে মরণের
ওরা ভয় করে সেই স্মৃতিকে
ওরা ভয় পেয়েছে দুঃস্বপনে।

ওরা ভয় পেয়েছে রবসন
জনতার কলোচ্ছাসে ভয় পেয়েছে
একতার তীব্রতায় ভয় পেয়েছে
হিম্মতের শক্তিতে ভয় পেয়েছে রবসন
ওরা সংহারের মূর্তি দেখে ভয় পেয়েছে রবসন।।

শিল্পী সংগ্রামী পল রবসন (Shilpi Songrami Paul Robeson)

কথা:?
সুর:?

ওরা জীবনের গান গাইতে দেয়না
শিল্পী সংগ্রামী পল রবসন
আমরা তোমারই গান গাই ওরা চায়না।।

তুমি চেয়ে দেখ রবসন
আমাদের ঐকতানে ঘুম ভেঙ্গেছে
বিপ্লবের বহ্নি দেখে বুক কেঁপেছে
তোমার ঐ সংগীতে ভয় পেয়েছে রবসন
ওরা প্রতিরোধ প্রস্তুতিতে ভয় পেয়েছে রবসন।।

মোরা জয় করেছি একতা
মোরা দূর করেছি হীনতা
ওরা ভয় পায় তাই আমাদের
ওরা ভয় পেয়েছে আজ একতায়।

তুমি মৃত্যুহীন যে রবসন
পৃথিবীর প্রতি ভোরে পথে প্রান্তরে
মেহনতী জনতার প্রতি অন্তরে
তোমারই একতার গান শোনা যায় রবসন
সারা দুনিয়ার শোষিতেরা এক হয় রবসন।।

পল রবসন (Paul Robeson)

মূল কবিতা: নাজিম হিকমত (তুর্কী)
সুর ও কন্ঠ: অজিত পান্ডে

ওরা ভয় পেয়েছে রবসন
ভয় রাত্রি প্রভাত হবার
ভয় রূপের, ভয় শব্দের, ভয় স্পর্শের।

ওরা আমাদের গান গাইতে দেয়না পল রবসন
তীব্র নিখাদে গাওয়া নিগ্রো ভাই আমার
আমরা আমাদের গান গাই ওরা চায়না
ভালবাসায় ওদের আতঙ্ক
বীজ আর মাটিতে আতঙ্ক
আতঙ্ক স্রোতের জলে।

আর কোন বন্ধুর হাতের স্মৃতি
যা চায়না কোন সুদ, কোন দস্তুরে।
যে হাত তাদের মনিবন্ধে দু’দন্ড
পাখির মত কোনদিন বসেনি।
আমাদের গান ওদের আতঙ্ক।।

পদ্মারে (Padma Re)

কথা ও সুর: মৈনাক মহলানবীশ
কন্ঠ: অজিত পান্ডে

পদ্মারে, তোর ঢেউয়ে ঢেউয়ে আমি
নাও বাইয়া যাই পদ্মারে
মোর জনম গেল তোরই কোলে
তবু তোর পানে চাওয়া না ফুরায় ।।

আজও মনে পড়ে সেই দিনগুলি
যবে বৈঠা হাতে আমি প্রথম তুলি
সেই উথালি-পাথালি বাংলাদেশের
ভাষাযুদ্ধের জোয়ার এসে
মিলল তোর জলে ।।

আজও ভুলি নাই সেই দিনগুলি
যবে তোর বুকেতে নাও বাইয়া চলি
সেই উথালি-পাথালি বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধের জোয়ার এসে
মিলল তোর জলে ।।

পদ্মারে, তোর দুই পারেতে আজও
পাখির গান শুনি আমার গানের সুরেতে
পদ্মারে, তোর দুই পারেতে ধানের
ক্ষেতে দোলা লাগে একই হাওয়াতে
কোজাগোরী আর রমজানের চাঁদ
হাসে দেখি তোর একই জলেতে ।।

আট ঘোড়ার গান (Aat Ghorar Gaan)

মূল রচনা: ব্রেটল ব্রেখ্‌ট
অনুবাদ ও সুর: অজিতেশ বন্দোপাধ্যায়
কন্ঠ: অজিত পান্ডে

একটা গল্প বলি শুনুন, একটা গল্প বলি
দিনের গোড়ায় রাতটা যেমন তেমনি গল্পের গোড়া
এক দেশে এক রাজার ছিল আট আটটা ঘোড়া।

সাতটা ঘোড়া প্রাণ পণ লড়ত ছিল কাজের কাজী
আট নম্বর ঘোড়া ছিল কুঁড়ে এবং পাজী
তবু রাজা বলত তাকে ”তুমি সেরা ঘোড়া
যুদ্ধের কাজ দেখতে শুনতে নেইকো তোমার জোড়া”।।

জোর কদম, জোর কদম, জোর কদম
টগবগ টগবগ টগবগ টগবগ টগবগ টগবগ টগবগ।
ভোর হবার আগে রাজার যুদ্ধ জেতা চাই
রাজা বাঁচলে সবাই বাঁচবে ভরসা একটাই
নয় তো জীবন যাবে।।

সাতটা ঘোড়া প্রাণপণ লড়ে জীবনটুকু বাকী
আট নম্বর ঘোড়া করে যুদ্ধ তদারকী।
আঁধার রাতে ঝরঝর ঝরে সাতটা ঘোড়ার রক্ত
আট নম্বর পতাকা বয়, রাজার ভীষণ ভক্ত।।
জোরসে লড়, জোরসে লড়, জোরসে লড়
টগবগ টগবগ টগবগ টগবগ টগবগ টগবগ টগবগ।
ভোর হবার----- ---নয় তো জীবন যাবে ।।

যুদ্ধ জেতা হলে পরে হবে কানাকানি
আট নম্বর ঘোড়া পাবে অনেক দানাপানি।
সাতটা ঘোড়ার দানাপানি এক জাগাতে জড়,
রাইফেল হাতে একটি ঘোড়া সাতজনার চেয়ে বড় ।।

সোনায় মোড়ানো বাংলা (Sonay Morano Bangla)

কথা ও সুর: মকসুদ আলী খান সাঁই

সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের
শ্মশান করেছে কে,
এহিয়া তোমায় আসামীর মত
জবাব দিতেই হবে।।

শ্যামল বরণ সোনালী ফসলে
ছিল যে সেদিন ভরা
নদী নির্ঝরে সদা বয়ে যেত
পূত অমৃত ধারা
অগ্নিদহনে সে সুখ স্বপ্ন
দগ্ধ করেছে কে।।

আমরা চেয়েছি ক্ষুধার অন্ন
একটি স্নেহের নীড়
নগদ পাওনা হিসেব কষিয়া
ছিলনা লোভের ভিড়।

দেশের মাটিতে আমরা ফলাব
ফসলের কাঁচা সোনা
চিরদিন তুমি নিয়ে যাবে কেড়ে
হায় রে উন্মাদনা
এই বাঙালীর বুকের রক্তে
বন্যা বহালো কে।।

জাগো সর্বহারা (Jaago Sarbahara)

কথা:
সুর:
(সূত্র: রাশিয়া’র জাতীয় সঙ্গীত)

জাগো জাগো জাগো সর্বহারা
অনশন বন্দী ক্রিতদাস
শ্রমিক দিয়াছে আজি সাড়া
উঠিয়াছে মুক্তির আশ্বাস।।

সনাতন জীর্ণ কু-আচার
চূর্ণ করি জাগো জনগণ
ঘুচাও এ দৈন্য হাহাকার
জীবন-মরণ করি পণ।।

শেষ যুদ্ধ শুরু আজ কমরেড
এসো মোরা মিলি একসাথ
গাও ইন্টারন্যাশনাল
মিলাবে মানবজাত।।

দিন এসেছে এইবার (Din Esechey Eibar)

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

দিন এসেছে এইবার
কিষাণ তোমার ভয় কি আর
শ্রমিক তোমার ভয় কি আর
শক্ত হাতের বজ্র মুঠোয়
ধর হাতুড়ি কাস্তে আর
মার শাবল--হেঁইয়া হো।।

অন্ন তোমার যে লুটেছে
বস্ত্র তোমার যে কেড়েছে
তার দিন শেষ হয়েছে
জেল জুলুম শেষ এবার।।

অন্ধকারের চার দেয়ালে বন্দী কেন আর
শাবল চালা শাবল চালা
জোরসে শাবল মার
শাবল মারো---হেঁইয়ো
জোরসে মারো---হেঁইয়ো
আরও জোরে---হেঁইয়ো
ভেঙ্গে করো চুরমার।।

আবার লড়াই হোক (Abar Lorai Houk)

কথা: ?
সুর: ?

শেষ হয়ে গেছে শোষকের দিন
বিদ্রোহ শুরু হোক
অধিকার নিতে চলে এস যত
নিচের তলার লোক
আবার লড়াই হোক।।

আবার না হয় তিরিশ লক্ষ প্রাণ
দেব মোরা বলিদান
মানুষের মত বাঁচার দাবীতে
মেনে নেব সেই শোক।।

ভুল করে আর বারে বারে মোরা
ভুলের মাশুল দেবনা
যত ভুল সব নির্মূল করে
তাতিয়ে এনেছি চেতনা।

কৃষক শ্রমিক সবার ঐক্য পণ
প্রয়োজনে দেবে রণ
মানুষের মত বাঁচার দাবীতে
মেনে নেবে সেই শোক।।

নওজোয়ান (Naw Joaan)

কথা: ?
সুর: সলিল চৌধুরী

নওজোয়ান নওজোয়ান বিশ্বে জেগেছে নওজোয়ান
কোটি প্রাণ একই প্রাণ একই স্বপ্নে মহীয়ান
তুচ্ছ ভয় সন্ত্রাসের রক্ত পিপাসু দানবের
একতার হিম্মতের শান্তি শপথে বলীয়ান।।

আমাদের মুক্তি স্বপ্নে সূর্যে রং লাগে
যৌবনেরই অভ্যূদয়ে হিমালয় জাগে
আমাদের শান্তি মিছিলে সিন্ধু চলমান
যুদ্ধ খোর সভ্যতার শত্রুরা সাবধান।।

আমরা মিলেছি মানবতার মহত্বে গরিমায়
মজুরে কিষাণে মধ্যবিত্তে সারা দুনিয়ায়
সাধ্য কোন দুশমনের যুদ্ধ ফের বাধায়
রক্তের তান্ডবে বিশ্ব ফের মাতায়
সারা দুনিয়ায়।।

আমরা মরূর ধূলিতে স্বর্গ উদ্যান গড়ি
শ্মশানে-মশানে মরণ বিজয়ী সভ্যতা গড়ি
ধরনীর আর্তনাদ হাসিতে ভরি
সখ্যেরও সঙ্গীতে বিশ্ব মুখরি
সভ্যতা গড়ি।।

আমি যে দেখেছি সেই দেশ (Aami Je Dekhechi Sei Desh)

কথা:
সুর:

আমি যে দেখেছি সেই দেশ
দেশ উজ্জ্বল সূর্য রঙীন।

আমি যে দেখেছি তাকে
শত ফুল বাগিচায়
পূবের বাতাসে কি
সুবাস বয়ে যায়।
ভ্রমরের গুঞ্জনে শুনেছি প্রকাশ
বিষাক্ত আগাছা হবে বিলীন।।

(অন্য ভাবে)
আমি যে দেখেছি সেই দেশ
দেশ উজ্জ্বল সূর্য রঙীন।

দেখেছি তাকে যে শত ফুল বাগিচায়
পূবালী বাতাসে কি সুবাস ছড়ায়।
ভ্রমরের গুঞ্জনে শুনেছি প্রকাশ
বিষাক্ত আগাছা হয়েছে বিলীন।।

সাবাশ বাংলাদেশ (Shabash Bangladesh)

কথা: সুকান্ত ভট্টাচার্য্য
সুর: ইমতিয়াজ আহ্‌মেদ

সাবাশ বাংলাদেশ,
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।।

লাখো লাখো হাত (Lakho Lakho Haath)

কথা ও সুর: পিন্টু ভট্টাচার্য্য

লাখো লাখো হাত
ভেঙ্গেছে আজিকে ভীরুতা খিল
রাজপথে-পথে উত্তাল
তাই জনমিছিল।।

হাজার কন্ঠ দাবী করে আজ
’শাস্তি চাই, শাস্তি চাই’
বজ্রকন্ঠে উঠেছে আওয়াজ
’বিচার চাই, বিচার চাই’
’শাস্তি চাই, বিচার চাই
হত্যাকারীর বিচার চাই ’।।

শহীদের ডাকে এতগুলো প্রাণ দিয়েছে সাড়া
ভূমিকম্পে দৈত্যপুরী দিয়েছে নাড়া,
একটি ডাকে এতগুলো প্রাণ দিয়েছে সাড়া
ভূমিকম্পে দৈত্যপুরী দিয়েছে নাড়া।

হাজার হাতে মশাল জ্বলে
দীপ্ত ক্রোধ
ঘৃণার আড়ালে হারিয়ে গিয়েছে
আজকে শোক
দৃপ্ত শপথে ঘোষণা তাই
’হত্যাকারীর বিচার চাই ’।।

রুখে দাও (Rukhey Daao)

কথা: এস, এম, আবু বকর
সুর: রবিউল হুসেইন

রুখে দাও, রুখে দাও,
রুখে দাও, রুখে দাও
ঘাতক দালালের ঐ কালো হাত
ভেঙ্গে দাও, রুখে দাও।।

ঘাতক পাতক সব নরপিশাচী
রক্ত লিপ্সায় ওরা উঠেছে মাতি
ওদেও রুখতে সব সাথীকে
ডেকে নাও, রুখে দাও।।

হাতে সবুজের মাঝে লাল সূর্য
ওরে তরুণ বাজা রণতূর্য
আবার ফিরে যাও, মুক্তিযুদ্ধে
ফিরে যাও, রুখে দাও।।

জনতার সংগ্রাম চলবেই (Janata-r Sangraam Chalbei)

কথা: সিকান্দার আবু জাফর
সুর: শেখ লুৎফর রহমান

জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই চলবেই।।
হতমানে অপমানে নয়, সুখ সম্মানে
বাঁচবার অধিকার কাড়তে দাস্যের নির্মোক ছাড়তে
অগণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ চলবেই চলবেই।।

প্রতারণা প্রলোভন প্রলেপেই হোক না
হোক না আঁধার নিশ্চিদ্র
আমরা তো সময়ের সারথী
নিশিদিন, নিশিদিন কাটাবো বিনিদ্র।
দিয়েছি তো শান্তি আরও দেবো স্বস্তি
দিয়েছি তো সম্ভ্রম আরো দেবো অস্থি
প্রয়োজন হলে দেবো এক নদী রক্ত
রক্ত, রক্ত, রক্ত।
হোক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত
অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে
একদিন সে পাহাড় টলবেই টলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই ।।

হতে পারি পথশ্রমে আরও বিধ্বস্ত ধিকৃত নয় তবু চিত্ত
আমরা সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী চলবার আবেগেই তৃপ্ত।
আমাদের পথরেখা দুস্তর দুর্গম
সাথে তবু অগণিত সঙ্গী বেদনার কোটি কোটি অংশী
আমাদের চোখে চোখে লেলিহান অগ্নি সকল বিরোধ বিধ্বংসী।
এই কালো রাত্রির সুকঠিন অর্গল
কোনদিন আমরা তো ভাঙবোই
মুক্ত প্রাণের সাড়া আনবই।
আমাদের শপথের প্রদীপ স্বাক্ষরে
নুতন সূর্যশিখা জ্বলবেই চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই।

পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে (Purba Digonte Surya Utheche)

কথা: গোবিন্দ হালদার
সুর: সমর দাস

পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে
পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল
জোয়ার এসেছে জন সমুদ্রে, রক্ত লাল
বাঁধন ছেঁড়ার হয়েছে কাল।।

শোষণের দিন শেষ হয়ে আসে
অত্যাচারীরা কাঁপে আজ ত্রাসে
রক্তে আগুন প্রতিরোধ গড়ে
নয়া বাংলার নয়া শ্মশান ।।

আর দেরি নয় উড়াও নিশান
রক্তে বাজুক প্রলয় বিষাণ
বিদ্যুৎ গতি হউক অভিযান
ছিঁড়ে ফেলো সব শত্রু জাল ।।

বান এসেছে মরা গাঙ্গে (Baan Esechey Mora Gaang-e)

কথা ও সুর: মুকুন্দ দাস

বান এসেছে মরা গাঙ্গে খুলতে হবে নাও
তোমরা এখনও ঘুমাও
কত যুগ গেছে কেটে দেখেছ কত স্বপন
এবার বদর বলে ধরো বৈঠা জীবন-মরণ পণ।
দমকা হাওয়ার কাল গিয়াছে
ফাগুন বইছে পাল খাটাও।
কঁাঁদতে হবে সারা জীবন
যুগ যুগানেতর তপশ্যাতে এসেছে এই লগন
পারের মাঝি হাল ধরেছে
মিছে পরের মুখ তাকাও।।

ভয় কি মরণে (Bhoy Ki Moroney)

কথা ও সুর: মুকুন্দ দাস

ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে
মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে
তা থৈ তা থৈ থৈ দিমি দিমি দ্রম দ্রম
ভূত পিশাচ নাচে যোগিনী সঙ্গে
দানব দলনী হয় উন্মাদিনী
আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে
সাজ রে সন্তান হিন্দু-মুসলমান
থাকে থাকিবে প্রাণ, না হয় যাইবে প্রাণ
নিতে হয় মুকুন্দেরে নিও রে সঙ্গে।।

গ্রাম নগর (Graam Nagar)

কথা: সলিল চৌধুরী
সুর: সলিল চৌধুরী

গ্রাম নগর- মাঠ পাথার বন্দরে তৈরী হও
কার ঘরে জ্বলেনি দীপ, চির আঁধার তৈরী হও।।

কার বাছার জোটেনি দুধ শুকনো মুখ, তৈরী হও,
ঘরে ঘরে ডাক পাঠাও, তৈরী হও, জোট বাঁধ,
মাঠে কিষাণ, কলে মজুর, নওজোয়ান জোট বাঁধ
এই মিছিল সব হারার, সব পাওয়ার এই মিছিল।।

হে মহাজীবন (Hey Maha Jivaan)

কথা: সুকান্ত ভট্টাচার্য্য
সুর: ইমতিয়াজ আহ্‌মেদ

হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো।।
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো
হে মহাজীবন।।

প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতা
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝল্‌সানো রুটি
হে মহাজীবন।।

বিচারপতি (Bichaar Poti)

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা
আজ জেগেছে এই জনতা।
তোমার গুলির, তোমার ফাঁসীর,
তোমার কারাগারের পেষণ
শুধবে তারা ওজনে তা এই জনতা।।

তোমার সভায় আমির যারা
ফাঁসির কাঠে ঝুলবে তারা,
তোমার রাজা-মহারাজা
কড়জোরে মাগবে বিচার;
ঠিক জেনো তা, এই জনতা।।

তারা নতুন প্রাতে প্রাণ পেয়েছে,
তারা ক্ষুদিরামের রক্তে বীজে প্রাণ পেয়েছে,
তারা জালিয়ানের রক্তস্নানে প্রাণ পেয়েছে,
তারা ফাঁসি কাঠে জীবন দিয়ে
প্রাণ পেয়েছে, প্রাণ পেয়েছে,
গুলির ঘায়ে কলজে ছিঁড়ে প্রাণ পেয়েছে,
প্রাণ পেয়েছে এই জনতা।।

নিঃস্ব যারা সর্বহারা তোমার বিচারে,
সেই নিপীড়িত জনগণের পায়ের ধারে
ক্ষমা তোমায় চাইতে হবে
নামিয়ে মাথা, হে বিধাতা।
রক্ত দিয়ে শুধতে হবে
নামিয়ে মাথা, হে বিধাতা।
ঠিক জেনো তা, এই জনতা।।

ব্যারিকেড বেয়নেট (Barricade bayonet)

আবু বকর সিদ্দিকি

ব্যারিকেড বেয়নেট বেড়াজাল
পাকে পাকে তড়পায় সমকাল
মারী ভয়-সংশয় ত্রাসে
অতিকায় অজগর গ্রাসে
মানুষের কলিজা
ছিঁড়ে খুঁড়ে খাবলায়
খাবলায় নরপাল।

ঘুম নয় এই খাঁটি ক্রান্তি
ভাঙো ভাই খোঁয়াড়ির ক্লান্তি
হালখাতা বোশেখে
শিস্‌ দেয় সৈনিক হরিয়াল।।

দুর্বার বন্যার তোড়জোড়
মুখরিত করে এই রাঙা ভোর
নায়ে ঠেলা মারো হেই এইবার
তোলো পাল তোলো পাল ধরো হাল।।

কড়া হাতে ধরে আছি কবিতার
হাতিয়ার কলমের তলোয়ার
সংগ্রামী ব্যালাডে
ডাক দয়ে কমরেড কবিয়াল।।

কমরেড এই রাত আঁধিয়ার (Comrade Ei Raat Andhiyaar)

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

কমরেড এই রাত আঁধিয়ার
অজগর নিঃশ্বাস চারিধার
পিশাচের মোকাবেলা এই ক্ষণ
কাঁধে নাও দূর্বার হাতিয়ার।।

চোখে জ্বালো শপথের ইস্পাত
ভেঙ্গে ফেল শত্রুর বিষ দাঁত
মনে আনো দুরন্ত বিশ্বাস
জয় কর জনতার স্বাধীকার।।

কমরেড এই রাত ঘুম নেই
জেগে আছি অতন্দ্র পাহারায়
নিষ্ফল স্বপ্নের ধুম নেই
শান্তির মরীচিকা সাহারায়।

পাপ অন্যায় করো প্রতিরোধ
প্রতি রক্তের নাও প্রতিশোধ
কেন আর বৃথা কাল অপচয়
কেন ভয় সংশয়বাদী আর।।

তূর্য নিনাদ (Turja Ninaad)

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

তূর্য নিনাদ বাজাও গর্বে
হে বীর হে সৈনিক
গর্জে উঠুক তোমার কন্ঠে
দৃপ্ত প্রাণের মন্ত্র হে নির্ভীক।।

অন্তবিহীন অন্ধকার শেষে
নতুন সূর্য আলোর উন্মেষে
ভাঙ্গো শৃঙ্খল মোহ বন্ধন
শাসন শোষণ যন্ত্র বৈদেশিক।।

উৎপীড়িত নির্যাতিত অনন্য দেশ
দুঃখ অশ্রু গ্লানির তোমার নাইকো শেষ।

স্বৈরাচারীর শক্তি বাণ কেড়ে
অবসাদ ভয় ক্লান্তি ঘুম ঝেড়ে
মহাজনতার অগ্রপথিক
জাগাও ধরণী কাঁপাও দিগ্বিদিক।।

অন্ধকারের পথ এড়িয়েতো নয় (Andhakarer Path Eriye to Noy)



অন্ধকারের পথ এড়িয়েতো নয়
পেরিয়েই যেতে হবে বেরিয়ে
বাধা-বন্ধের থেকে চোখ ফিরিয়ে তো নয়
সরিয়েই যাব বাধা সরিয়ে।।

পথ যদি নাই থাকে সুযোগে ছাওয়া
তা বলে কি থেমে যাবে এগিয়ে যাওয়া
স্থির ঠিকানায় থির লক্ষ্য রেখে
বাড়িয়েই যাব গতি বাড়িয়ে।।

সমুখে চেয়ে থাকা আর নয়
জীবন কে জানবার এই তো সময়
উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ভোর যেখানে
অতীতের রঙে-রূপ রেখায়
বর্তমানের শুভ স্বপ্ন আনি
মনগড়া ভয় যাব মাড়িয়ে।।

ক্লান্তি নামে গো (Klanti Namey Go..)

কথা ও সুর: সলিল চৌধুরী
কন্ঠ: দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়

ক্লান্তি নামে গো, রাত্রি নামে গো
বাইতে পারিনা যে তরণী আর কতদূর
হায় কোথায় শ্যামল মাটির মায়া
হায় কোথায় সবুজ বনের ছায়া
কোথা সে নীড় গভীর প্রেমের মোহনা
আহা কোথায় রে সে দিন।

এ শুধু নিঠুর ভেঙ্গে ফেলা
দিবা নিশি ভাসাই আশার ভেলা
মনোবীণার তারে শুধুই বাজে
আয় আলোক।

তবু তুমি আশার দীপ জ্বেলে রেখো
বাতায়নে আমার পথ চেয়ে থেকো
আবার আমি তোমারই দ্বারে
বিজয়ীর মত আসিব
মর্মর মুখরিত সন্ধ্যায়।

এই জীবনে যদি কিছু হারায়ে থাকি
এই ভূবনে জানি জানি যাবেনা ফাঁকি
এই বিরহ বিধুর রাতে
মিলনের গান গাহিও
আবার আমি এই
ধরণীর ধূলির পরে আসিব
মর্মর মুখরিত সন্ধ্যায়।

আমার প্রতিবাদের ভাষা (Amaar Protibader Bhasha)

কথা:
সুর: সলিল চৌধুরী

আমার প্রতিবাদের ভাষা
আমার প্রতিরোধের আগুন
দ্বিগুণ জ্বলে যেন
দ্বিগুন দারুণ প্রতিশোধে
করে চূর্ণ ছিন্ন -ভিন্ন
শত ষড়যন্ত্রের জাল যেন
আনে মুক্তি আলো আনে
আনে লক্ষ শত প্রাণে।

আমার প্রতি নিঃশ্বাসের বিষে
বিশ্বের বঞ্চনার ভাষা
দারুণ বিস্ফোরণ যেন
ধ্বংসের গর্জনে আসে
যত বিপ্লব বিদ্রোহের আমি সাথী
আমি মাতি যুদ্ধেও হেথায় সেথায়
মানুষের মুক্তির বিপন্নতায়
আমারই রক্ত ঝরে
দেশে দেশে বন্দরে
শত মরু কন্দরে
গৌরী শিখায়
মিলনের তীর্থের সন্ধানে।

এই সূর্যদয়ের ভোরে (EI Suryadayer Bhore Eso Aaj)

কথাঃ সলীল চৌধুরী
সুরঃ সমর দাস

এই সূর্যদয়ের ভোরে এস আজ
সবে মিলে নিই এ শপথ
এই ধ্বংস স্তুপ মাঝারে
গড়ব ইমারত।।

তাই কি আসে বুকে বুকে যত আশা
স্বপ্ন এবার পাবে নতুন করে ভাষা
ভেঙ্গে গেছে ঘর
তাদের হারায়ে গেছে সব
লাখ শহীদের আত্মার শোন কলরব
দু’বাহুতে আন বল
ভুলে যাই দলাদল
এস পূর্ণ করি মনোরথ।।

নতুন ফসল মাঠে মাঠে হবে বোনা
ক্ষেতে খামারে ভরে ভরে রবে সোনা
বাংলা মা গো নতুন সাজিতে সাজাব
মনি মুক্তায় ও আঁচল ভরিয়ে দেব
যত কারখানা কল মুখরিত অবিরল
হবে মুক্ত এ মুক্তির পথ।।

ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো (Chele Ghumalo, Para Juralo)

ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো
বর্গী এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে।।

ধান ফুরল, পান ফুরল
খাজনার উপায় কি?
আর ক’টা দিন সবুর কর
রসুন বুনেছি।।

ছেলে ঘুমিও না, পাড়া জুড়াবেনা
বর্গী আছে দেশে
ধানের গোলা শেষ হয়ে যাবে
খড় কুড়াবে শেষে
ওরা আজও ফন্দি আঁটে
সূর্য নেবে লুটেপুটে
আমরা সবাই ঘুমিয়ে গেলে
সূর্য নাববে কি সে।।

বজ্র কঠিন শপথ (Bazra Kathin Swapath)

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

বজ্র কঠিন শপথ আবার লহ সবাই
শান্তি চাই
সবার উপরে মানুষ সত্য কহ সবাই
শান্তি চাই।।

মানবতার নিধনযোগ্য বিভত্সতা
বিভেদ বুদ্ধি বিদ্বেষ বিষ হিংস্রতা
হিংসা দ্বন্দ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে করব ছাই
শান্তি চাই।।

পলাতক আজ শুভ্র কপোত আকাশ নীল
আগামী সূর্যে করবে আবার সে ঝিলমিল।

তা যদি না হয় বুঝব আমরা মানুষ নই
শিরায় শিরায় এখনও পশুর রক্ত বই
তা যদি না হয় গর্ব বড়াই দিও না ঠাঁই
শান্তি চাই।।

বাংলার ছাত্র জনতা (Banglar Chatra Janata)

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

বাংলার ছাত্র জনতা
এক মিছিলে দাঁড়া
নতুন দিনের ডাক এসেছে
এক সাথে দে সাড়া।।

ঐ কারখানাতে কলে, ঐ পথে মাঠে জলে
(সবাই) খেটে মরে, না পায় খেতে
না পায় থাকার ঘর
তাই ঋন মুক্তির ঝান্ডা উঁচায়ে ধর।।

ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই মরে ভয়ে
(সেথায়) না হয় পড়া, জীবন গড়া
শুধু্‌ই গুলির ডর
তাই সন্ত্রাসের মুন্ডু নিপাত কর।।

আমাদের নানা মত নানা দল (Amader Nana Mot Nana Dol)

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

আমাদের নানা মত নানা দল
আমাদের নানা পথ নানা ছল
মহাপাপ অন্যায় স্বার্থের বন্যায়
আমাদের দেশ গেল রসাতল।।

আমাদের এ দেশের ইতিহাস
নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস
জান- মান দি’ কবুল
তবু শুধু দিক ভুল
অমৃতের পেয়ালায় হলাহল।।

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম
শহীদের মৃত্যু সে উদ্দাম
বিক্ষত জীবনের বিস্ময়
আজ বুঝি তার কোন নাই দাম।

সত্যের নাই কোন অধিকার
অবিচারে নাই কোন প্রতিকার
এ কি ঘোর অভিশাপ
নাই কোন পরিতাপ
মুক্তির এই নাকি ফলাফল।।